খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৩০ জুন, ২০২৪

Breaking News

  দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত

ডা. জনি নিখোঁজ : সাতক্ষীরায় ওসি ও এসআই বাড়ির মালামাল ক্রোকের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা সদর থানার লকআপ থেকে ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় হাইকার্টের নির্দেশে দায়েরকৃত মামলায় সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসেনের বাড়ির মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার (২৭ জুন) সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম এস এম আশিকুর রহমান এ আদেশ দেন। আগামী ১৭ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে।

একইসাথে জামিন বাতিলের আবেদন না’ মঞ্জুর করা হয়েছে সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লার।

মালামাল ক্রোক ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামীরা হলেন, পিরাজপুর জলা সদরর পিরাজপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ শেখের ছেলে সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক শেখ ও নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার পাংখাচর গ্রামের মোঃ সাঈদুর রহমানের ছেলে ও সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক উপপরিদর্শক মাঃ হিমেল হোসেন।

জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামী হলেন, গোপালগঞ্জ জেলা সদরের করপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদের মেল্লার ছেলে ও সাতক্ষীরা সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা।

মামলা ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৬ সালর ৪ আগষ্ট রাত সাড় ৯টার দিকে অসুস্থ বাবার জন্য বাইসাইকেলে ঔষধ কিনতে যেয়ে সাতক্ষীরা শহরের লাবনী সিনেমা হলের সামনে ফটোস্টাটের দোকান থেকে সদর থানার উপপরিদর্শক হিমেল হোসেন শহরের পারকুকরালির শেখ আব্দুর রাশেদ এর ছেলে হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জনিকে(২৭) থানায় ধরে নিয়ে যান। ৫,৬ ও ৭ আগষ্ট স্ত্রী জেসমনি নাহার রেশমা তার শ্বশুর আব্দুর রাশেদ, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ ও স্বজনদের নিয়ে থানা লক আপ থেকে খাবার দিয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ ও উপপরিদর্শক হিমলের সঙ্গে কথা বললে জনির আল্লার দল নামে একটি জঙ্গি সংগঠণের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানানো হয়।

স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে তৎকালিন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসেন ও উপপরিদর্শক হিমেল ডাঃ জনির স্ত্রী রেশমার কাছে দাবি করেন মাটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। ৮ আগষ্ট থানায় গেলে জনিকে পাওয়া যায়নি।

অবশেষে ২০১৭ সালর ২ মার্চ হাইকার্টে রিট পিটিশন (২৮৩৩/১৭) দাখিল করেন জেসমিন নাহার রেশমা। মামলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়। পরবর্তীত আদালত মোখলছুরকে ওই বছরর ১২ এপ্রিলের মধ্যে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করানোর নির্দেশের পাশাপাশি ৯ মে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবদন দাখিলের জন্য ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্তকালে সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লা নিখাোজ ডাঃ মোখলেছুর রহমান জনি আল্লার দল নামে একটি জঙ্গী সংগঠণ করতেন বলে লিখিতভাব উল্লেখ করেন। আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ হাইকার্টে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবদনে থানা লক আপ থেকে ডাঃ জনির নিখোঁজ হওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

২০১৮ সালর ২৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবদন পর্যালোচনা শেষে মহামান্য হাইকার্ট ডাঃ জনি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়রী নিয়ে তার তদন্ত করে প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ, ফিরোজ হোসেন মোল্ল্যা ও উপপরিদর্শক হিমেল হোসনের বিরুদ্ধ বিভাগীয় মামলা গ্রহণ ও একইসাথ তাদর বিরুদ্ধে আদালতপ মামলা করা যেতে পারে বলে এক আদেশে উল্লেখ করেন।

পরবর্তীতে বিশিষ্ঠ মানবাধিকার কর্মী মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের চেয়ারপার্সন অ্যাড. সুলতানা কামালের সহায়তায় নিখোঁজ জনি’র বাবা শেখ আব্দুর রাশেদ ২০২১ সালর ১৭ আগস্ট সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী সদর থানার সাবক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ এমদাদ হোসন, ফিরোজ হোসেন মোল্লা ও উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে জনিকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগ আনা হয়।

এর আগ ২০১৮ সাল উপপরিদর্শক হিমেলের বিরুদ্ধে ৬/১৮, ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ ও ফিরাজ হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে যথাক্রমে ১৬/২০ ও ১৭/২০ বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় এমদাদ হোসেন ও ফিরোজ হোসেন মোল্লাকে চাকুরি থেকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে শেখ এমদাদ হোসেন উচ্চ আদালতে গেলে পরবর্তীতে তাকে পাবনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন তিনি অবসরে। একইভাবে হাইকোর্টের নির্দেশে ফিরোজ হোসেন মোল্ল্যা বর্তমানে এন্টিটেরিজম ইউনিটে ও উপপরিদর্শক হিমেল খুলনায় কর্মরত আছেন।

এদিকে গত ২৬ মে এমদাদ হোসেন ও হিমেল আদালতে হাজিরা দিয়েও দ্বিতীয় দফায় কাঠগোড়ায় না উঠে পালিয়ে যাওয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। ফিরোজ হোসেন মোল্লা জামিন পান।

সাতক্ষীরা জজ কার্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড.মোসলেমউদ্দিন ও অ্যাড. ফরহাদ হোসেন বলেন, থানা লকআপে তিনদিন আটক রাখার পর ডাঃ মোখলছুর রহমান জনি নিখোঁজ হয়ে গেলো। ভিকটিম উদ্ধারে আসামীদের রিমাণ্ড নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। গত ২৬ মে এমদাদ শেখ ও হিমেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা বৃহস্পতিবার আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় তাদের বাড়ির মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছন আদালত। একই সাথে ফিরোজ হোসেন মোল্লার জামিন বাতিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেহেদী হাসান আসামী এমদাদ শেখ ও হিমেলের মালামাল ক্রোকের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!